
করোনা ভাইরাস এখন অনেক বড় একটি আতঙ্কের নাম। এর ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে অনেক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। যেমন, জন সমাগম নিষিদ্ধ, স্কুল – কলেজ – অফিস – আদালত বন্ধ ঘোষণা , ঘরের বাহির হতে নিষেধ ইত্যাদি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নের পথে করোনা অপূরণীয় ক্ষতির সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশের সব পরিবারের লোকের ব্যাংক ব্যালেন্স নাই, আলমারীতে হাজার হাজার/লক্ষ লক্ষ টাকা নেই। অনেকের আবার দিনের আয় ৭০-৮০ টাকা, এর বেশি আয় হলে, পরের দিনের জন্যে জমা করে রাখে খাবারের জন্য। আবার যারা গৃহস্থ , তাদের কাছে সম্বল হচ্ছে জমির ফসল। এই করোনার কারণে বলতে গেলে এক দিকে থমকে গেছে জনজীবন। তার মধ্যে আবহাওয়ার এই করুন অবস্থা যা গৃহস্থের ক্ষেত্রে বলা যায়, “মরার উপর খাড়া” । অনেকের জমির ফসল ঘরে আসেনি, যাদের এসেছে খুব কম। তাদের মুখে একটাই কথা, ” আল্লাহ আমাদের পরের ফসল আসা অবধি অন্তত খেয়ে বাঁচার মত আয় টুকু দাও”। এ অবস্থায় একজন ছেলে/মেয়ে পরিবারের কাছে টাকা চায় মোবাইলের ডেটা কিনবে বলে।
“কেন?”
“অনলাইনে ক্লাস আছে।”
” কতজন করে?”
“৩০-৪০ জন।”
“তোমার ব্যাচের শিক্ষার্থী কত?”
“৭৫-৮০ জন।”
“অর্ধেকই তো করে না। হাতে এখন বাজার কেনার টাকা নাই। তোমার করতে হবে না।”
বাবা মার এই অসহায় পরিস্থিতি দেখে তারাও কিছু বলতে পারে না, মুখের একমাত্র উত্তর, “ঠিক আছে।”
( আপনি/আপনারা অনেক বড়। চিন্তা শক্তির মাত্রা আমার থেকে অনেক বেশি। ছোট মানুষ, ছোট মাথা নিয়ে হয়তো অনেক বেশি কিছু ভাবছি।)
আপনারা ভাবুন, এই প্রায় ৫০% শিক্ষার্থীর কি হবে? তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত / নিম্ন বিত্ত পরিবারের হলেও নিজের মেধার জোরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেয়েছে। তবে এই শিক্ষা কি তাদের প্রাপ্য নয়? অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক কাভারেজ খুব বেশি শক্তিশালী নয়। যারা ক্লাস করে অনলাইনে তাদের কি সবাই খুব ক্লিয়ারলি বুঝতে পারে? একবার ভেবে দেখুন, এই ডেটা কেনার টাকা দিয়ে কি একজনের এক বেলা খাবারও হবে না?
তাছাড়া সেশন জট নিয়ে আপনারা খুব বেশি চিন্তিত। সেশন জট হলো সিলেবাস শেষ না হওয়া। তবে কি আপনারা শিক্ষা গ্রহণের থেকে সিলেবাস কমপ্লিট এর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন না? জাতি এর কারণে উপহার পাবে ” অর্ধ শিক্ষিত গ্রাজুয়েট” নামক কিছু প্রাণী। বছর শেষে ১০০% শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট পাবে, কিন্তু মেধা শক্তির কি খুব ভালো বিকাশ হবে?
এবার আসি আপনাদের কিছু প্রশ্নে।
⚫” এমন গরীব, তাহলে ফোন বা ফেসবুক চালায় কিভাবে?”
উত্তর – বর্তমানে বাটন ফোনেও ফেসবুক চালানো যায়। আবার সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন ও কিনে অনেক টাকা জমিয়ে।
⚫” জমানো টাকা দিয়ে কি ডেটা কেনা যায় না?”
উত্তর- কেনা যায়। কিন্তু জমানো টাকা তো আর ডিম দেয় না যে বারবার বাড়বে। তাছাড়া সেই টাকা দিয়ে সে অন্তত কিছু খেয়ে বাচতে পারবে।
⚫” কোন এলাকায় বর্তমানে স্ট্রং নেটওয়ার্ক কাভারেজ নেই?”
উত্তর – বাংলাদেশ এখনও ১০০% বিদ্যুতায়িত দেশ হয়নি। প্রত্যন্ত গ্রাম্য জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা এখনও কম।
⚫” এখন তো অনেক অফার থাকে, খুব কম টাকায় অনেক জিবি পাওয়া যায়। তাহলে?”
উত্তর – অফার গুলো অনেক টা এমন যে, আপনার সামনে এক গামলা রান্না করা মাংস রেখে বলা হলো, এগুলো আপনাকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে। আর এখন ইন্টারনেটে এই বাজেটে আরো দাম বাড়িয়েছে।
⚫” আমরা তো খুব কম ক্লাস নিই। তাহলে সমস্যা কই?”
উত্তর – আপনারা ক্লাস নেন ১-১.৫ ঘণ্টা, তার জন্যে এমবি দরকার। আর সেটা যে টাকা দিয়ে কিনবে সেই টাকার খাবার কিনে আপনার সেই ছাত্র ২৪ ঘণ্টা পার করে দিতে পারবে।
আসলে সমস্যা কি জানেন, আপনারা সেশন জট (সিলেবাস কমপ্লিট না হওয়া) নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু সঠিক ভাবে তারা বুঝতে পারছে কি না অর্থাৎ তারা ঠিক ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে কি না, সেটা নিয়ে আপনারা ভাবছেন না। আবার আপনারা ৫০% শিক্ষার্থী কে প্রাধান্য দিয়ে, বাকি ৫০% শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। ৫০% শিক্ষার্থীর কথা না ভেবে ১০০% শিক্ষার্থীর কথা ভাবুন।
এর বেশি আর আমার ছোট মাথায় আসছে না। Stay home, stay protected 🙂.
নাম: জিনিয়া ইসলাম জিম।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
লোক সাহিত্য বিভাগ,
২০১৯-২০ সেশন।